সন্দেশখালির সভা থেকে শুভেন্দুর মন্তব্যের জবাব — লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কুকথা, তৃণমূলের পাল্টা সভা ও প্রতিবাদ
গত ৯ জুন বিজেপি নেতা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সন্দেশখালির মঠবাড়িতে এক রাজনৈতিক সভায় বলেন,
“লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পাঁচশো-হাজার টাকার জন্য মহিলারা নিজেদের শাখা-সিঁদুর বিসর্জন দিচ্ছেন।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্পে তিন হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।”
এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়ায়। মহিলা সমাজের অপমান হয়েছে বলেই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের। এরপর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন এবং আজ রবিবার সন্দেশখালিতে পাল্টা সভার আয়োজন করে বিষয়টি আরও সরব করে তোলে।
আজকের পাল্টা সভার মূল বক্তব্য:
কাকলি ঘোষ দস্তিদার (TMC সাংসদ):
“শুভেন্দু অধিকারী মহিলাদের অপমান করেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কোনও দান নয়, এটি বাংলার মায়েদের অধিকার। ওঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।”
শশী পাঁজা (রাজ্যের মন্ত্রী):
“নারীদের সম্মান নিয়ে বিজেপির মুখে বড় কথা মানায় না। যারা মা, বোনদের টাকার সঙ্গে তুলনা করে কটূক্তি করেন, তারা রাজ্যের জন্য বিপজ্জনক।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব:
“সন্দেশখালির ভূমিপুত্র ও ভূমিকন্যারা শুভেন্দুর ভাষা মানে না। যাঁরা এখানে বারবার অপপ্রচার করেন, তাঁদের জবাব দেবে জনতা।”
মহিলা কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ:
এই সভায় ছিলেন প্রচুর মহিলা তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকরা। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ড —
“আমরা মায়েরা বিক্রি হই না”,
“শুভেন্দুর কুকথার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলাম”,
“লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আমাদের সম্মান”।
স্থানীয় এক মহিলার মন্তব্য:
“আমরা আমাদের শাখা-সিঁদুরকে সম্মানের চোখে দেখি। শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত। ওঁর ক্ষমা চাইতেই হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সভা ছিল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-
নারী ভোটারদের মন জয় করা: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প রাজ্যের প্রায় ২ কোটি মহিলাকে সহায়তা করে। বিজেপি নেতার মন্তব্যকে সামনে এনে তৃণমূল এই ভোটব্যাঙ্ককে আরও দৃঢ় করতে চাইছে।
-
সন্দেশখালি ঘিরে তাপমাত্রা বাড়ানো: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সন্দেশখালির পরিস্থিতি বিজেপি বারবার আলোচনায় আনছে। তাই তৃণমূলও জবাব দিতে চায় তাদের ‘ঘাঁটিতেই’।
-
লক্ষ্য লোকসভা ২০২৬: মহিলা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বড় ‘কাউন্টার-ন্যারেটিভ’ গড়ে তুলছে তৃণমূল।
উপসংহার:
সন্দেশখালির কনমারি বাজারের এই পাল্টা সভা স্পষ্ট করে দিয়েছে — তৃণমূল কংগ্রেস শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যকে কেবল রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে চায়। বাংলার নারীদের অপমানের বিরুদ্ধে একপ্রকার মহিলা প্রতিরোধ মঞ্চ হয়ে উঠেছে এই সভা। এখন দেখার, শুভেন্দু অধিকারী এর পরে কী জবাব দেন।